IMF প্রবাসীদের আয়ের ওপর কর বসাতে চায়? জানুন পুরো প্রস্তাব ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
IMF প্রবাসীদের আয়ের ওপর কর বসাতে চায়

IMF প্রবাসীদের আয়ের ওপর কর বসাতে চায়
ভূমিকা
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আলোচনায় একটি নতুন বিষয় সামনে এসেছে — প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্সে কর আরোপের প্রস্তাব।
এ নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনার ঝড় বইছে। কেউ বলছে IMF এই শর্ত দিয়েছে, আবার কেউ বলছে এটি শুধুমাত্র আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
চলুন দেখে নেওয়া যাক — আসলে বিষয়টি কী, IMF ঠিক কী প্রস্তাব দিয়েছে, এবং সরকার কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
IMF কী বলেছে বাংলাদেশকে
IMF-এর সাম্প্রতিক ট্যাক্স পলিসি মিশন রিপোর্টে (Tax Policy Mission) বাংলাদেশ সরকারকে কয়েকটি মূল পরামর্শ দিয়েছে—
-
করভিত্তি (Tax Base) সম্প্রসারণ: করদাতার সংখ্যা বাড়ানো ও নতুন আয় উৎসকে করের আওতায় আনা।
-
অতিরিক্ত কর ছাড় ও প্রণোদনা হ্রাস: এমন সব ট্যাক্স ইনসেন্টিভ বা রিবেট বাদ দেওয়া যা অর্থনীতিতে বাস্তব ফল দেয় না।
-
কর প্রশাসন সংস্কার: পুরোনো রাজস্ব বোর্ড (NBR) পুনর্গঠন করে “Revenue Policy Division” ও “Revenue Management Division” গঠন করা।
-
ন্যূনতম বিকল্প কর (Minimum/Alternative Tax) ব্যবস্থায় পরিবর্তন: যেন সব ব্যবসায়িক খাত সমানভাবে কর দেয়।
IMF-এর বক্তব্য অনুযায়ী, এই পদক্ষেপগুলো না নিলে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত রাজস্ব আয় করতে পারবে না এবং ভবিষ্যতের ঋণ পরিশোধেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রেমিট্যান্সে করের আলোচনা
বাংলাদেশের অনেক সংবাদমাধ্যম (যেমন কালের কণ্ঠ, সময় নিউজ, যুগান্তর ইত্যাদি) শিরোনাম করেছে যে “IMF চায় প্রবাসীদের পাঠানো অর্থেও কর”।
তবে IMF-এর কোনো অফিসিয়াল নথিতে এখনো স্পষ্টভাবে লেখা হয়নি যে রেমিট্যান্সে কর আরোপ বাধ্যতামূলক হবে।
বিষয়টি মূলত এসেছে “Tax Base Expansion” বা করভিত্তি বাড়ানোর প্রস্তাব থেকে — যার আওতায় সরকার চাইলে রেমিট্যান্সকেও বিবেচনা করতে পারে।
অর্থাৎ, এটি এখনো আলোচনার পর্যায়ে, কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।
সরকারের অবস্থান
সরকারি সূত্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে —
“প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস। এই খাতকে করের আওতায় আনা হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।”
এছাড়া, সরকার মনে করে রেমিট্যান্সে কর আরোপ করলে প্রবাসীরা অনানুষ্ঠানিক পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
তাই আপাতত সরকার রেমিট্যান্সে কর আরোপের বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
⚖️ অর্থনীতিবিদদের মতামত
অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন—
-
করভিত্তি সম্প্রসারণ দরকার, তবে রেমিট্যান্সে কর বসানো হলে তা জনবিরোধ সৃষ্টি করতে পারে।
-
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর কর বসালে দ্বৈত কর (double taxation) সমস্যা দেখা দিতে পারে, কারণ প্রেরক দেশেও হয়তো কর দিতে হয়।
-
বাংলাদেশে রেমিট্যান্সে কর বসানো হলে বিদেশে থাকা শ্রমজীবী মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যেতে পারে।
IMF প্রস্তাবের অন্যান্য দিক
IMF শুধু রেমিট্যান্স নয়, আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও প্রস্তাব দিয়েছে—
-
বিলাসদ্রব্যে কর বৃদ্ধি
-
কর ফাঁকি রোধে ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম
-
বাজেট ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
-
বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার দক্ষতা বৃদ্ধি
এইসব প্রস্তাবের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামোকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করা।
উপসংহার
IMF-এর সঙ্গে বাংলাদেশের এই আলোচনাটি মূলত রাজস্ব ঘাটতি পূরণ ও অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার প্রচেষ্টা।
যদিও রেমিট্যান্সে কর আরোপের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, কিন্তু সরকার এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
প্রবাসীদের অবদান দেশের অর্থনীতিতে অপরিসীম — তাই এই খাতকে করের আওতায় আনতে হলে সরকারের উচিত হবে পর্যাপ্ত আলোচনা, জনমত ও আইনি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
“IMF প্রস্তাব বাংলাদেশ ২০২৫”, “রেমিট্যান্সে কর বাংলাদেশ”, “প্রবাসীদের আয় কর”, “IMF loan Bangladesh”