
- ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬
ফিফা বিশ্বকাপ: ফুটবলের সর্ববৃহৎ উৎসব
ভূমিকা
ফিফা বিশ্বকাপ হলো বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল টুর্নামেন্ট। প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত এই টুর্নামেন্ট কোটি কোটি ফুটবল প্রেমীর হৃদয় স্পর্শ করে। ১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ইভেন্টে পরিণত হয়েছে।
Italy vs Estonia |
Oct 11, 2025, at 9:45 PM | Watch | Live |
Spain vs Germany |
Oct 11, 2025, at 9:45 PM | Watch | Live |
Bulgaria vs Turkiye |
Oct 11, 2025, at 9:45 PM | Watch | Live |
Portugal vs Ireland |
Oct 11, 2025, at 9:45 PM | Watch | Live |

ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাস
প্রথম বিশ্বকাপ (১৯৩০)
উরুগুয়েতে প্রথম ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে। মোট ১৩টি দল অংশগ্রহণ করে এবং উরুগুয়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। তখন থেকে এই টুর্নামেন্ট ক্রমাগত জনপ্রিয়তা পেতে থাকে।ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬
বিশ্বকাপের বিবর্তন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে পুনরায় শুরু হয় এই মহাযজ্ঞ। বছরের পর বছর ধরে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমানে ৩২টি দল ফাইনাল পর্বে খেলে।
সবচেয়ে সফল দেশসমূহ
ব্রাজিল – পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন
ব্রাজিল ফিফা বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল দেশ, যারা পাঁচবার শিরোপা জিতেছে (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪, ২০০২)। পেলে, রোনালদো, রোনালদিনহোর মতো কিংবদন্তি খেলোয়াড়রা ব্রাজিলকে ফুটবলের মহাশক্তিতে পরিণত করেছেন। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬
জার্মানি এবং ইতালি
জার্মানি এবং ইতালি উভয়েই চারবার করে বিশ্বকাপ জিতেছে। জার্মানির শৃঙ্খলাবদ্ধ খেলা এবং ইতালির শক্তিশালী রক্ষণভাগ তাদের সফলতার মূল চাবিকাঠি।
আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স
আর্জেন্টিনা তিনবার (১৯৭৮, ১৯৮৬, ২০২২) এবং ফ্রান্স দুইবার (১৯৯৮, ২০১৮) বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেছে।
স্মরণীয় মুহূর্তসমূহ
পেলের জাদু
১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে পেলের নেতৃত্বে ব্রাজিলের খেলা ছিল ফুটবলের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাদের আক্রমণাত্মক এবং দর্শনীয় ফুটবল আজও মানুষের মনে জাগরূক।
ম্যারাডোনার “হ্যান্ড অফ গড”
১৯৮৬ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার বিতর্কিত গোল এবং একই ম্যাচে করা “শতাব্দীর সেরা গোল” ফুটবল ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জিদানের মাথায় গুঁতো
২০০৬ সালের ফাইনালে জিনেদিন জিদানের মাতেরাজ্জিকে মাথায় গুঁতো দেওয়ার ঘটনা ফুটবলের সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্তগুলোর একটি। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬
বিশ্বকাপের প্রভাব
অর্থনৈতিক প্রভাব
বিশ্বকাপ আয়োজক দেশের অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলে। পর্যটন, হোটেল ব্যবসা, এবং স্থানীয় অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হয়।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
বিশ্বকাপ বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষকে একত্রিত করে। এটি আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রীতির প্রতীক।
আধুনিক বিশ্বকাপ
প্রযুক্তির ব্যবহার
ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) এবং গোল লাইন টেকনোলজির মতো আধুনিক প্রযুক্তি খেলাকে আরও ন্যায্য এবং স্বচ্ছ করে তুলেছে।
নারী বিশ্বকাপ
১৯৯১ সাল থেকে ফিফা নারী বিশ্বকাপও আয়োজন করছে, যা নারী ফুটবলের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬: বাছাই পর্বের বিস্তারিত তথ্য
টুর্নামেন্টের নতুন ফরম্যাট
২০২৬ সালের বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোতে যৌথভাবে আয়োজিত হবে। এবারই প্রথম ৪৮টি দল অংশ নেবে, যা টুর্নামেন্টকে আরও বড় এবং প্রতিযোগিতামূলক করবে। আয়োজক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
বাছাই পর্বের সময়সূচি
বাছাই পর্ব শুরু হয়েছিল ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে, যখন দক্ষিণ আমেরিকার (CONMEBOL) তিনটি ম্যাচ খেলা হয়। কলম্বিয়ার খেলোয়াড় রাফায়েল সান্তোস বোরে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে বাছাই পর্বের প্রথম গোল করেন। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬
মহাদেশভিত্তিক বাছাই পর্বের বিবরণ
ইউরোপ (UEFA) – ৫৪টি দেশ
ইউরোপীয় বাছাই পর্ব মার্চ থেকে নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত চলছে। ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ফিফা সদর দফতরে গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দলগুলোকে ১২টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে – কিছু গ্রুপে চারটি এবং কিছু গ্রুপে পাঁচটি দল রয়েছে। পাঁচটি দল নিয়ে গঠিত গ্রুপগুলো (G-L) মার্চ ২০২৫ থেকে শুরু হয়েছে, আর চার দলের গ্রুপগুলো (A-F) সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হবে। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬
প্লে-অফ ম্যাচগুলো মার্চ ২০২৬-এ অনুষ্ঠিত হবে।
দক্ষিণ আমেরিকা (CONMEBOL) – ১০টি দেশ
ইতিমধ্যে ছয়টি দল যোগ্যতা অর্জন করেছে: আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইকুয়েডর, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া এবং প্যারাগুয়ে। বলিভিয়া আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে।
দক্ষিণ আমেরিকার বাছাই পর্ব রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে খেলা হচ্ছে, যেখানে প্রতিটি দল একে অপরের বিরুদ্ধে হোম এবং অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলছে।
আফ্রিকা (CAF) – ৫৪টি দেশ
দলগুলোকে নয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে, প্রতিটি গ্রুপে ছয়টি করে দল রয়েছে। নভেম্বর ২০২৩ থেকে অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত হোম-অ্যান্ড-অ্যাওয়ে রাউন্ড রবিন ম্যাচ খেলা হচ্ছে।
প্রতিটি গ্রুপের বিজয়ী সরাসরি ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করবে, এবং সেরা চারটি রানার-আপ দল প্লে-অফে অংশ নেবে।
মিশর, মরক্কো এবং তিউনিশিয়া ইতিমধ্যে আফ্রিকা থেকে বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে।
এশিয়া (AFC) – ৪৭টি দেশ
এশিয়াকে আটটি সরাসরি যোগ্যতার স্লট এবং একটি আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ স্লট বরাদ্দ করা হয়েছে।
যোগ্যতা অর্জন প্রক্রিয়ায় পাঁচটি রাউন্ড রয়েছে; প্রথম দুটি রাউন্ড ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা হিসেবেও কাজ করছে।
জর্ডান এবং উজবেকিস্তান উভয়ই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে।
উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান (CONCACAF) – ৩৫টি দেশ
তৃতীয় রাউন্ড সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর ২০২৫ মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই রাউন্ড থেকে তিনটি CONCACAF দল সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করবে এবং দুটি দল আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফে যাবে।
আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ
AFC, CAF, CONMEBOL এবং OFC থেকে একটি করে দল এবং CONCACAF থেকে দুটি দল আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফে অংশ নেবে। দলগুলোকে ফিফা র্যাঙ্কিং অনুযায়ী সাজানো হবে, এবং সর্বনিম্ন চারটি দল দুটি একক-এলিমিনেশন ম্যাচে খেলবে।
বাছাই পর্বের বর্তমান অবস্থা (অক্টোবর ২০২৫)
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাছাই ম্যাচ চলছে। অক্টোবর ২০২৫-এ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো সম্পন্ন হয়েছে। ইউরোপের বাছাই পর্ব শুরু হয়েছে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
গ্রুপ পর্বের ড্র
২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের ড্র ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ এবং বিশ্বকাপ
যদিও বাংলাদেশ এখনও বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেনি, তবে বাংলাদেশি ফুটবল প্রেমীরা প্রতি বিশ্বকাপে উৎসাহের সাথে বিভিন্ন দলকে সমর্থন করেন। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।
উপসংহার
ফিফা বিশ্বকাপ শুধুমাত্র একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট নয়, এটি একটি বৈশ্বিক উৎসব যা সীমানা, ভাষা এবং সংস্কৃতির বাধা অতিক্রম করে। প্রতি চার বছরে এই টুর্নামেন্ট নতুন নায়ক তৈরি করে, স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেয় এবং কোটি কোটি মানুষকে এক সুতোয় গাঁথে। ফিফা বিশ্বকাপ সত্যিই ফুটবলের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে গৌরবময় উৎসব। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬